শিবিরের হেডকোয়ার্টারও কইলাম পাকিস্তানেই…

শিবিরের হেডকোয়ার্টারও কইলাম পাকিস্তানেই…

গোলাম আযম যখন বলে জামাতের হেডকোয়ার্টার লাহোর, তখনও লাহোর এখনও লাহোর। কথাটারে কেউ কেউ (পড়েন ছাগবান্ধবরা) বয়সজনিত স্লিপ অব টাং বইলা বেনিফিট অব ডাউট দেয়। তার পক্ষের লোকজন ঝাপাইয়া পইড়া আগের আয়াত পরের আয়াত দেখতে কয়।

আমি হাসতে পারি না। কারণ নেপথ্যের ষড়যন্ত্রটা চোখের সামনে দিব্যি দেখতে পাই বইলা আমি আতঙ্কিত হই। আমি মানুষরে বলি, দেখ তোরা, দেখ ওরা কি ষড়যন্ত্র করতেছে! ওরা মুখে বাংলাদেশ বললেও দেশটারে আবার পাকিস্তান বানাইতে চায়। ওগো সব কিছু পাকিস্তানের পক্ষে। ওরা পাকিগো দালাল। পাবলিক আমারে ঝাড়ি মারে- আপনার মিয়া রাজাকারফোবিয়া হইছে, সবকিছুতে রাজাকার দেখেন। স্বীকার কইরা কই-হ, ঠিকাছে। তারপর আবার চিক্কুর পারি।

এই ফোবিয়া কইলাম এমনে এমনে হয় নাই। জামাতরে আমরা যে একটা যুদ্ধাপরাধী দল বলি এবং এর শীর্ষ নেতারা সব যে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত, সেটা কোন ভিত্তিতে? এর একটা বড় কারণ আমাদের বুদ্ধিজীবি হত্যা। এই দায়টা প্রমাণিতভাবেই আল-বদরের কাধে পড়ে। আর কে না জানে এই আল-বদর গঠিত হইছিলো ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যদের নিয়া। ১৯৭১ সালে ছাত্রসংঘের পাকিস্তান সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী, পূর্ব পাকিস্তান সভাপতি আলী আহসান মুজাহিদ, হাই কমান্ডের মীর কাশেম আলী, কামারুজ্জামান- এরাইতো এখন জামাতের নেতৃত্বে। এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আসাটা কোন অর্থে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক? নাকি বলতে চান আল-বদর যে ইসলামী ছাত্র সংঘই গঠন করছিলো তার প্রমাণ দিতে হবে আগে! সেটা তো আছেই ভুরিভুরি। নাকি বাঙালী প্রমাণে চলবে না, খাটি পাকিস্তানী প্রমাণ লাগবে?

অক্কে। সেটাও দেওয়া যাবে। তার আগে একটা কথা বইলা নেই। জামাতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠনের নাম ইসলামী জমিয়াত তালাবা (আইজেটি)। পূর্ব পাকিস্তানে এটারই বাংলা নাম ছিলো ইসলামী ছাত্র সংঘ। স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক অধিকার ফেরত পাওয়ার পর এরা নাম নেয় ইসলামী ছাত্র শিবির (দুই সংগঠনের লোগোতেও ব্যাপক মিল)। ১৯৭১ সালে এই ছাত্র সংঘের সদস্যগো আল-বদর নামের খুনে বাহিনীতে রিক্রুট করার দায়িত্ব ছিলো আইএসআইর মেজর রিয়াজ হুসেইন মালিকের ওপর। বলা হয়, আল-বদর নামটাও তারই দেওয়া। উইকিতে এমনটাই লেখা : The name Al-Badar was given by major Riaz hussain during the passing out ceremony of first Al-badar group

১৯৯৭ সালে পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে একটা প্রামান্য চিত্র তৈরি হয় ‘জমিয়াত কি পঞ্চাশ সাল’ নামে। সেই বিশাল প্রামান্যচিত্রে পূর্বপাকিস্তানের ইসলামী জমিয়াতে তালাবা সম্পর্কে রিয়াজ হুসেইনের প্রশংসাধন্য বয়ান মিলে। প্রামান্য চিত্রটির একটা সংক্ষিপ্ত ভার্সন আছে ইউটিউবে। ‘আল-বদর ১৯৭১’ নামে ওই ফুটেজটি পাকিস্তানীদেরই আপলোড করা। সেখানে ভূমিকায় সমাজতান্ত্রিক ও সেক্যুলার ছাত্রদের (ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন) মোকাবেলায় যোগ্য প্রতিপক্ষ হিসেবে আইজেটিরেই মানা হয়। এবং এরা যখন বন্দুক ধরছে (মুক্তিবাহিনী হিসেবে) তখন তাদের ঠেকাইতে ছাত্রসংঘর বন্দুক ধরাও ফরজ বিবেচিত হইছে।

রিয়াজ হুসেইন কয়েকটা ঘটনার বর্ণণা দিয়া এদের মাহাত্ম প্রচার করছে (একদম ইসলামী ছাত্রসংঘ কথাটা উল্লেখ কইরা)। যেমন একজন ছাত্রসংঘ সদস্য নাকি তার আপন ভাইরে পাকিস্তানীদের হাতে তুইলা দিছে সে মুক্তিবাহিনী এবং সুবাদে ভারতের দালাল বিধায়। তার যুক্তি এমন ভাইয়ের মরে যাওয়াই উচিত যে আমার কোটি মুসলমান ভাইর লগে বেইমানি করতেছে! বহুত দড়ো ইমান, বুঝতে হইবো। আরেকজন ভাইয়ের জানাজা পইড়াই (সে জানাজায় নাকি রিয়াজ স্যারও আছিলো) আবার ডিউটিতে হাজির। আরেকজন আকারে ছোট হওয়ায় রিয়াজ তারে সরাইয়া দিছিলো তুমি পিচ্চি বইলা। সে নাকি গোড়ালির উপর দাড়াইয়া বলছে- এখন তো বড় হইয়া গেছি! (গল্পগুলা কোত্থেকে মারা হইছে আন্দাজ কইরা নিতে পারেন পাঠকরা, প্রচুর পাকিজেনারেলের বইয়েই মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়া এমন গল্প আছে। সিদ্দিক সালিকের বই থিকা একটা তুইলা দিলাম)। সেই পোলার জেহাদী তাগত দেইখা মুগ্ধ রিয়াজ তারে রিক্রুট করছিলো। আর সেই আল-বদরের নামে নাকি মুক্তিবাহিনী ভয়ে কাপতো (হাহাহা, শালারা চোখ, হাত-পা বাইন্ধা হত্যা করতো এমনই ভীতু, এগোরে ডরাইতো মুক্তিবাহিনী!)।

তো আফসোস এইসব আল-বদরের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারে নাই পাকিস্তান। সেই ফুটেজে আমাদের স্বাধীনতার পর এদের নির্বিচারে হত্যা করা হইছে বইলা দুঃখ প্রকাশ করা হইছে। এবং কোন ফুটেজটা ব্যবহার করা হইছে জানেন? আমাগো বুদ্ধিজীবিদের লাশের। কুত্তার বাচ্চারা ঠিক যেই হত্যাকান্ডের দায়ে অপরাধী, সেই হত্যাকান্ডরে নিজেদের সঙ্গীসাথী বইলা চালাইয়া যাইতেছে!

আহারে আমাগো পাকিক্রিকেটপ্রেমী বাঙালী। মুসলমান ক্রিকেটার দেইখা যাগো ঈমান খাড়ায়া যায়। ২০০৯ সালে ফয়সালাবাদ ইসলামী জমিয়াতে তালাবা একটা ফুটবল-ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করে যার নাম ছিলো ‘আল-বদর স্পোর্টস ফেস্টিভাল ২০০৯’। সেই ক্রীড়ানুষ্ঠান উৎসর্গ করা হইছিলো পূর্ব পাকিস্তানে শহীদ (!) আল-বদরদের উদ্দেশ্যে। সেই অনুষ্ঠানে আমাদের ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। একটা ফুটেজ দিলাম, যেখানে ইনফোতে লেখা আছে: Nazim e Ala Islami Jamiat Talaba Pakistan,Br. Ateeq ur Rehman Khan Speaks in IJT Punjab Medical College’s Albadar Floodlight Sports Festival 2009. Dedicated to the martyrs of Albadr East Pakistan

পাকি জমিয়তে তালাবার লগে ইসলামী ছাত্র শিবিরের যোগসূত্রটা মিথ্যা মনে হয়? তাইলে সরাসরি তাগো ওয়েবসাইটে চইলা গেলেই হবে। দুইটা স্ক্রিনশট দেওয়া হইলো প্রমাণ হিসেবে (যার উপরে ইউআরএল আছে এবং সেখানেই সত্যমিথ্যা যাচাই হয়ে যাবে)। মতিউর রহমান নিজামী ৬৯ সালে প্রথমবারের মতো জমিয়তে তালাবার সভাপতি নির্বাচিত হয় (যে কয় সে তখন হাফপ্যান্ট পইড়া স্কুলে যাইতো, সে মিছা কয়)। ১৯৭১ সালে সে পুননির্বাচিত হয়। মইত্যা এবং গোলামের সম্পর্কে বিশেষ প্রশংসাসূচক বাক্য লেখা হইছে জমিয়াতে তালাবার ব্লগস্পটে । নিজামী সম্পর্কে লেখা হইছে:

Motiur Rahman Nizami (Born 31 March 1943) : Motiur Rahman Nizam is the current chief (Ameer) of the Jamaat-e-Islami Bangladesh, which is the largest Islamic political party in Bangladesh. Nizami rose in the ranks of the Jamaat-e-Islami in East Pakistan in the 1960s, after being a leader of a student organization, Islamic Chhatro Shango (now Islami Chhatro Shibir). During the liberation war of 1971, Nizami actively supported the cause of West Pakistan and formed the Al-Badr Force in which he acted as the supreme commander of the Al-Badr Militia (খুউব খিয়াল কইরা).

আরেকটায় দেখা যাইতেছে ১৯৮১ সাল থিকা জমিয়তে তালাবা পাকিস্তান তাগো বেংলাদেশী (বানান লক্ষ্যনীয়) সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীগুলায় অংশ নেয়, তাগো পূর্বপাকিস্তানী ভাইরাও বেংলাদেশ থিকা তাগো অনুষ্ঠানে যায়। আলবদর ফ্যান ক্লাব ফেসবুকেও আছে। সেইখানেও জমিয়তে তালাবার পাকি আর বেঙ্গা দুই অংশেরই ব্যাপক অংশগ্রহণ। নীচে এমন কিছু গ্রুপ এবং পেইজের লিংক দেওয়া হইলো। ইসলামমনস্ক ভাইবেরাদররা দলে দলে হাজিরা দিতে পারেন।

জামাত শিবিররে পাকিস্তানীগো দালাল কইয়া গালি দিয়া লাভ নাই- ভাবেন অনেকে। কারণ আমাগো শত্রু তো ভারত। হিন্দুগো ঠেকাইতে আমাগো মুসলমান ভাই লাগবো। দালালী যদি করি, হিন্দুগো করুম ক্যা, মুসলমানগোই করুম। লগে সৌদিআরব, আম্রিকা আর চায়নারে ফাও পামু। দুইবার ভাবেন। লিংকগুলায় গুতান। ভালো কইরা পড়েন। ফুটেজ দেখেন, শুনেন। উর্দু না বুঝলে যে বুঝে (বন্ধু তালিকায় প্রচুর দেখবেন ইনফোতে লেখা উর্দু বুঝে) তারে কন (নয়তো কয়টা দিন আরেকটু ধৈর্য্য ধরেন)। তারপর হিসাব মিলান। বাংলায় যেইগুলা আমাগো লগে কথা কইতেছে, সব কিন্তু আসলে পাকিস্তানী। ওগো মধুর কথায় ভুললে আর ওগো পয়সাখাওয়া সুশীল বুদ্ধিজীবি তথা ছাগবান্ধবগো কথায় কান দিলে এমন দিন আইবো সামনে….(কথাটা শেষ করার সাহস পাইলাম না, এতই ভয়ঙ্কর)

আলবদর আর জমিয়তে তালিবার ফেসবুক পেইজ আর গ্রুপ: 

আলবদর-আল শামস : দ্য ফরগোটেন হিরোজ

জমিয়তে তালিবা মীরপুর 

ইসলামী জমিয়তে তালিবা হেডকোয়ার্টার (লাহোর)

এর বাইরে আরো কিছু ওপেন আর ক্লোজ গ্রুপ আছে বদরগো সম্মানে। সবশেষে একটা গান শুনাই। তার আগে জমিয়াতে তালেবার পতাকাটা দেইখেন , লাল-সবুজটা কাকতালীয় হইলেও ওইটায় কিন্তু পাকিস্তান লেখা নাই, লেখা আছে বাগেস্তান। গানটা ওগো দলীয় সঙ্গীত। ঠিক ২ মিনিট ৬ সেকেন্ডে শুনবেন বাঙাল আর আল-বদর। আর কিছু বলার নাই। খালি জাইনেন অমি পিয়াল কইছে, শিবিরের হেডকোয়ার্টার তখনও লাহোর, এখনও লাহোর। বিশ্বাস রাইখেন।