গোলাম নামা: আত্মপক্ষ সমর্থনের নামে ব্যাপক মিথ্যাচার- শেষ পর্ব

গোলাম নামা: আত্মপক্ষ সমর্থনের নামে ব্যাপক মিথ্যাচার- শেষ পর্ব

[ গতবছর ১৩ ডিসেম্বর বেশ ক’টি টিভি চ্যানেলে গোলাম আযমের একটি সাক্ষাতকার সম্প্রচারিত হয়। এর তথ্যবহুল জবাবও দিয়েছেন অনেকে নানা মাধ্যমে। আমি নিজেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু লেখাটা শেষ হচ্ছিলো না নানা ঝামেলায়। অবশেষে ৫ পর্বে আমি আমার তরফে গোলামের মিথ্যাচার খন্ডন করার চেষ্টা করেছি। আগ্রহীদের পড়ার অনুরোধ রইলো]

সাংবাদিকঃ তাহলে বিজয় হয়ে যাওয়ার পর পর আপনি দেশে ছিলেন না কেন?

গোলাম আযমঃ আমি, ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলো, ২০শে নভেম্বর রমজানের পরের দিন, রমজান শেষ হলো, রমজানের পরের দিন, ঈদের পরের দিন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে যোগদান করার জন্য আমি লাহোর গেলাম। জামায়াতের হেডকোয়ার্টার তো লাহোর, তখনো ছিল লাহোর, এখনো লাহোর (খিয়াল কইরা), এটার পরে, আমি ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম, একথা বলার জন্য যে, আপনি দেশের প্রেসিডেন্ট, পূর্ব পাকিস্তানে কি হচ্ছে আপনি যান না কেন? আপনি টিক্কা খানরে দিয়া রাখছেন। এরজন্য কয়েকদিন সময় লাগলো আমার সেখানে।

আরেকটা হাস্যকর মিথ্যাচার। ৪ ডিসেম্বর গোলাম জেদ্দা যায় বাদশাহর কাছে মওদুদীর বিশেষ টেলিগ্রাম নিয়ে। ১১ ডিসেম্বর সে পাকিস্তানে ফিরে আসে। সে ঘটনায় যাওয়ার আগে দেখা যাক গোলাম তা ঢাকতে কিসব বানোয়াট কথা বললো।

জামাতের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে যোগ দিতে নয়, তাদের সম্বর্ধনা নিতে গিয়েছিলো গোলাম। সেটাও ভুয়া অজুহাত, নেপথ্যে অন্য কাহিনী। ২২ নভেম্বর মওদুদীর জরুরী টেলিগ্রাম পেয়ে লাহোর যায় গোলাম। আগেই বলা হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খায়েশ তখন তার উচ্চারিত প্রতিটি বাক্য থেকে চুইয়ে পড়তো। ইয়াহিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যও তাই। ‘টিক্কা খানকে দিয়া রাখছেন নিজে কেনো যান না’ কথাটারও ঐতিহাসিক সত্যতা নাই। কারণ ডা. এম এ মালিককে বেসামরিক গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ৩ সেপ্টেম্বর, টিক্কা খান পাকিস্তান ফিরে এসেছেন তার আগেই। গভর্ণর হাউজে মালিকের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে গোলামও ছিলো, তার অভিনন্দন বার্তাও প্রকাশিত হয়েছে। অথচ আত্মজীবনী এবং সাক্ষাতকারে একই মিথ্যাচার চালিয়ে গেলো গোলাম।

সে সময়টায় পূর্ব পাকিস্তানে চলছে ইয়াহিয়ার সাজানো নাটক। বেসামরিক গভর্নর নিয়োগের পর তার পরিকল্পনা আবার নির্বাচন। আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সাংসদদের একাংশের নির্বাচনী ফলাফল বাতিল করে ও তাদের সামরিক আইন প্রশাসকের দফতরে বিভিন্ন মামলায় হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয় । আর বাকিদেরটা (মোট ৮৮ জন, যাদের একজন সাজেদা চৌধুরীকে নিয়ে কিছুদিন আগেও মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছে জামাত-শিবির) রেখে ওই আসনগুলায় পুনঃনির্বাচন। এই পুনঃনির্বাচন আসলে এক ধরণের সিলেকশন, সামরিক সরকার ঠিক করে দিয়েছে কারা নির্বাচিত হবে।

এ ব্যাপারে ইউএস এইডের কর্মকর্তা মরিস জে উইলিয়ামসের পাঠানো এক প্রতিবেদনে সাক্ষ্য মেলে। মার্কিন সরকারের ওই গোপন নথিতে মরিস উল্লেখ করেছেন ২৫ অক্টোবর রাও ফরমান আলী আরো ১০ সামরিক কর্মকর্তাকে নিয়ে এক বৈঠকে বসেছিলেন পুনঃনির্বাচনে কাদের নির্বাচিত করা হবে তার তালিকা করতে। সেখানে রাজাকারদের কথাও আছে (অশুদ্ধভাবে রাসিকার লেখা হয়েছে যদিও) এবং তাদের বিরুদ্ধে যথেচ্ছাচার এবং মুহূর্তের সিদ্ধান্তে কাউকে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। বলাবাহুল্য সেই নির্বাচিতদের একজন ছিলো গোলাম আযম। টাঙ্গাইল-৩ আসন থেকে (কাদের সিদ্দিকীর এলাকা!) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয় এর আগে অন্য আসন থেকে জামানত হারানো গোলামকে। ১৫ নভেম্বর পত্রিকায় সে তাকে অভিনন্দন জানানোদের সে শুভেচ্ছাও পাঠায়।

এরপর শুরু হয় তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লবিং, কিন্তু যোগ্যতায় এগিয়ে থাকে নুরুল আমিন। তখন তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার জন্য তদবির চালিয়ে যায় গোলাম। প্রসঙ্গত সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে সম্বর্ধনা দিয়েছিলো জামাতের ওয়ার্কিং কমিটি, ২৫ নভেম্বর সেজন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় ইয়াহিয়াকে ভারত আক্রমণের জন্য আহবান জানায় গোলাম । পাশাপাশি জানায় মুক্তিবাহিনীকে সামলানোর জন্য রাজাকাররাই যথেষ্ট। আগেই বলা হয়েছে তাদের পশ্চিম পাকিস্তানে উপস্থিতি ভালোভাবে নেয়নি ভুট্টোর দল, যুক্ত বিবৃতিতে তারা পূর্ব পাকিস্তানে জনগনের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয় জামাতিদের।

গোলামের এই ভারত আক্রমণের উস্কানি অবশ্য পাকিস্তানে পা রেখেই শুরু হয়। ২৩ নভেম্বর লাহোরে নেমেই সে ভারত আক্রমনের পক্ষে যুক্তি দেয়, পাশাপাশি রাজাকারদের ভারী অস্ত্রসস্ত্র দিতে আহবান জানায়।

এরপর সে ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে। রাওয়ালপিন্ডি থেকে ২ ডিসেম্বর লাহোরে ফিরে সাংবাদিকদের জানায় ইয়াহিয়ার সঙ্গে তার ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট শিগগিরই মন্ত্রীসভা গঠন করতে যাচ্ছেন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে গোলাম এর বিপক্ষে, জাতীয় অধিবেশন বসার আগে মন্ত্রীসভা গঠন করা ঠিক হবে না বলে মত দিয়েছে সে। রাওয়ালপিন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সে অবশ্য বিস্তারিত জানায় যা ছাপা হয় ২ ডিসেম্বরের পত্রিকাগুলোতে:

গোলাম আযমঃ এভাবে আমি ৩রা ডিসেম্বর আমি রওয়ানা দিলাম করাচী থেকে পিআই এর প্লেনে, এটিই পিআই এর শেষ প্লেন ছিল। ঢাকা থেকে সেদিন পিআই এর লার্স্ট প্লেন, লার্স্ট প্লেন এজন্য যে থার্ড ডিসেম্বর ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স থেকে ঢাকা এয়ারপোর্টে বোমা ফেলা হয়েছে। এয়ারপোর্ট বন্ধ হয়ে গেছে। সেজন্য আমার প্লেন এসে নামতে পারে নাই, আশ্রয় নিয়েছে গিয়ে জেদ্দায়। পয়লা তো তখন ইন্ডিয়ার সঙ্গে যে সম্পর্ক ছিল তা ইন্ডিয়ার উপর দিয়ে আসতে দিত না, পাকিস্তানের প্লেন আসতো ঐ শ্রীলঙ্কা হয়ে। তো প্লেন থেকে দেখলাম যে শ্রীলংকার নারিকেল বাগান পার হয়ে আসলাম, করাচী থেকে ওখানে তিন ঘন্টা লাগতো, সেখান থেকে এখানে আসতে আরো তিন ঘন্টা লাগতো, ছয় ঘন্টা ফ্লাইট ছিল। তারপরে দেখি যে প্লেন নামলো কলম্বো। কেন নামলো কিছু বলে না। তারপর দেখি যে, আরেকটা দেখা যায় পিআইএর, ঢাকা থেকে যেটা যাচ্ছিল, এদুটা এসে সেখানে নামলো। তিন ঘন্টা পর, প্লেন আবার উড়লো, তখন ক্যাপ্টেন ঘোষণা করলো যে, করাচী এবং ঢাকা এয়ারপোর্টের কোথাও যাওয়া সম্ভব না, যুদ্ধ বেধে গেছে, আমাদেরকে, আমাদের দুটা প্লেনকে ইন্টস্ট্রাকশন দেয়া হলো হয় আমরা তেহরান বা জেদ্দায় গিয়ে যেন আমরা আশ্রয় নেই। যখন নামলাম প্লেন থেকে. এমন আবেগ যে ওমরা করতে পারবো, কাবা ঘর দেখতে পারবো, এখানে আসার কতো স্বপ্ন, তখনো পারি নাই, তো ক্যাপ্টেন যে, ভূপালের লোক, ছ ফুটের ওপর লম্বা, আমাকে বললো যে আপনাকে আমি চিনি, আমি তবলিগ জামায়াতের সাথে সম্পর্ক, আমি কাকরাইল মসজিদে গেছি। তো, তেহরান যাইতে পারতাম, তেহরান বা জেদ্দা যে কোন যায়গায় যাওয়ার জন্য আমাদেরকে অর্ডার দেয়া হয়েছে, ঐ প্লেনটা তেহরান চলে গেছে, আমি বললাম যে জেদ্দা যাওয়ার সুযোগ পাইলে, ওমরা করার সুযোগ পাইলে তেহরান যাব কেন? তো, প্লেনে লন্ডন গেছে, তো এইভাবে আমার প্লেন জেদ্দায় চলে গেল। এরপরে ১০ই ডিসেম্বর ইন্ডিয়া পাকিস্তান সীজফায়ার করলো, একদিন যুদ্ধ বন্ধ থাকবে ঘোষণা করলো, যাতে বিদেশীরা চলে যেতে পারে, সেই দিন সেই ১০ তারিখে আমার প্লেন জেদ্দা থেকে করাচী আসলো। এভাবে আমি পাকিস্তানে আসলাম। তো আমি বলতেছিলাম যে, ৩রা ডিসেম্বর আমার প্লেন নামতে পারলো না, তারপর জেদ্দায় চলে গেলাম, তারপরে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।…

আত্মজীবনীতে আরো চমৎকার করে লিখেছে গোলাম:

ইতিহাস বলে ৩ ডিসেম্বর ভারত পাকিস্তানকে আক্রমণ করেনি। বরং ৩ ডিসেম্বর বিকেলে পাকিস্তান ভারতের বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ করে।অপারেশন চেঙ্গিস খান নামের এ হামলা শুরু হয় পাকিস্তানের স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে। ভারতের পাল্টা বিমান হামলা শুরু হয় সেদিন রাত নটায়। ৪ ডিসেম্বর ভোরে তেজগাও বিমানবন্দরে হামলা করে ভারতীয় বিমান বাহিনী। চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে বিমান হামলার আগেই পাকিস্তান ৩ ডিসেম্বর পিআইএর সমস্ত ফ্লাইট বাতিল করে। ৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত ডন পত্রিকার পুরোটা জুড়ে পাক-ভারত যুদ্ধের খবর থাকলেওপ্রথম পাতার একদম নীচে প্রথম কলামে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়।


সেদিন গোলামেরটা যদি শেষ ফ্লাইট হয় পিআইএর, তাহলে তার আগে নিশ্চয়ই অন্য আরো ফ্লাইট ছেড়েছিলো। শোনা যাক এমন একজনের বয়ান। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার (অবঃ) সেলিম বেগ পাক-ভারত বিমান যুদ্ধ নিয়ে এক স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেছেন ৩ ডিসেম্বরের পরিস্থিতি :

On December 3rd, I was returning from Karachi to Peshawar via Lahore by an afternoon flight of PIA Boeing 707 landing at Lahore about four in the evening. It was in the transit lounge that I met Sqn. Ldr. S.M. Anwar who was also traveling by the same flight as official courier with some secret documents. It was at Lahore that we came to know about the outbreak of the air war between Pakistan and India and PAF’s first air strike that evening against Indian Air Force bases. Our flight to Peshawar was cancelled and we were left stranded at Lahore Airport. On our insistence the PIA authorities made arrangements for us to travel to Peshawar by road and we left Lahore in a van at eight in the night.

[৩ ডিসেম্বর দুপুরে পিআইএর বোয়িং ৭০৭ ফ্লাইটে করাচি থেকে লাহোর হয়ে পেশোয়ার ফিরছিলাম। বিকাল চারটায় প্লেন লাহোর থামলো। ট্রানজিট লাউঞ্জে স্কোয়াড্রন লিডার এস এম আনোয়ারে সঙ্গে দেখা হলো যে একই ফ্লাইটে সরকারী কিছু গোপন দলিলপত্র নিয়ে যাচ্ছিলো।সেখানেই আমরা জানতে পারলাম ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিমান যুদ্ধ শুরু হওয়ার কথা। সেদিন সন্ধ্যায় পাকিস্তান ভারতের বিমানঘাটিগুলোতে প্রথম আক্রমন করে। আমাদের ফ্লাইট বাতিল করা হয় এবং আমরা লাহোর বিমানবন্দরে আটকা পড়ি। আমাদের ক্ষেত্রে পিআইএ বিশেষ ব্যবস্থা নেয়, রাত আটটায় একটা ভ্যানে করে পেশোয়ারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই আমরা।]

তাহলে গোলামের জেদ্দা ভ্রমণের কাহিনী কি। এটা এক লম্বা ঘটনা। সংক্ষেপে বললে, গোটা পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল চৌধুরী রহমত এলাহি পাকিস্তানের পক্ষে সমর্থন আদায় করার মধ্যপ্রাচ্যসহ, মিশর, লিবিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সে এক সফরে যায় এবং নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে ফিরে আসে। এসেই সে এক সংবাদ সম্মেলনে জানায় যে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ হলে মুসলিম দেশগুলো পাকিস্তানের পক্ষে সামরিক সহায়তা দিবে । ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারতকে আক্রমণ করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দেশের যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর মওদুদীর একটি বিশেষ টেলিগ্রাম নিয়ে সৌদি আরবে যায় গোলাম, সেটা ৪ ডিসেম্বর এবং তেহরান হয়ে। সেই টেলিগ্রামের বিষয়বস্তু ছাপা হয় ৫ ডিসেম্বরের পত্রিকাগুলোতে। গোলাম সৌদি আরবে ওমরাহ সেরে ১১ ডিসেম্বর পাকিস্তানে ফেরত আসে। এই সময়টায় জর্ডানের তরফে দুই স্কোয়াড্রন বি-ফোরটি বোম্বার পাকিস্তানকে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয় ইরানের মধ্যস্থতায়। যুক্তরাষ্ট্র দায়িত্ব নেয় যাতে ওই সময়টায় ইসরায়েল কোনোভাবে জর্ডান আক্রমণ না করে। এসব বিমান যথারীতি তেহরান হয়ে পাকিস্তানে পৌছে। এ বিষয়ে ৭ ডিসেম্বর , ৮ ডিসেম্বর , ৯ ডিসেম্বর ও ১৪ ডিসেম্বরের চারটি মার্কিন তারবার্তার লিংক দেওয়া হলো।

 Muslim States urged to stand with Pakistan.
Lahore, Dec. 5 (APP) : The chief of the Jammat-e-Islami, Maulana Syed Abul Aala Maudoodi, has appealed to the heads of 21 Muslim states to stand with Pakistan in this hour of great trial while fighting naked Indian aggression on East and West Pakistan borders.
In a telegram sent to the Muslim leaders the Maulana accused some world powers for not exerting influence to make India see reason.
The Maulana also condemned Russia, Israel and the world Jewry for siding with India in her aggression on Pakistan.
Maulana Maudoodi said India has been attacking East Pakistan in essantly since 22nd November, Pakistan tried her best to avoid war and waited international comity of nations in general and world powers particularly in the interest of peace. But none exerted its influence. To made India see reason. Now she has shamelessly attacked West Pakistan also and Pakistan had no choice but to declare war on her.
`I appeal in the name of Islam and Justice to your Majesty, Excellency to stand with Pakistan in this hour of great trial.
India is a big power a population of 550 million and huge military strength. Further, she is being helped by Russia, Israel and world Jewry.
Pakistan is a bulwark for the whole world of Islam against this rising Hindu imperialism. Strengthening this balwark is really the protection of’ all Muslim countries.
Mian Tufael Muhammad, acting chief. Jamaate- Islami Pakistan, has sent the following telegram to President Yahya Khan, general Abdul Hamid, Chief’ of Pakistan Army, Air Marshal A. Rahim, chief of Pakistan Air Force, Muzaffar Hassan, Vice-Admiral, Pakistan Navy.
`Entire nation is highly proud of the magnificent performance of our armed forces and I congratulate you and the valiant troops under you able command.
`We assure you that the whole nation stands behind you like a solid rock and will Inshallah spare no sacrifice in extending fullest cooperation to our galant soldiers, sailors and airmen in meting out a final and crushing defeat to our arch enemy of Islam. Allah is with us.

 গোলাম আযমঃ ‘৭৩ সালে শেখ মুজিব সরকার তিন কিস্তিতে ৮৬জন নেতার নাগরিকত্ব বাতিল করলো, পয়লা কিস্তিতে ছিল, উনচল্লিশজন, সেই তালিকায় হামিদুল হক চৌধুরী, নূরুল আমীন, মাহমুদ আলী, আমার নামও ঐ তালিকায় ছিল। নাগরিকত্ব বাতিল করার কারনে তো আমরা বাংলাদেশে আসার অধিকার, সুযোগ পাচ্ছি না, এরপরে ৭৬ সালের জানুয়ারী মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘোষণা করলো যে যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল তাদের মধ্যে যারা নাগরিকত্ব ফেরত চান সরাসরি সচিবকে লেখেন। আমি লেখলাম, কোন জবাব নাই। এরপরে আমার মা দরখাস্ত করলো, যে আমরাতো বেশী ফুসরত দিতে পারবো না, তো আপনার যাই পারেন দেন, তো একমাসের ভিসা দিল, ঐ ভিসায় আমি আসলাম। আসার পর আমি পাকিস্তানী পাসপোর্ট ফেলে দিলাম। যে আমি এদেশে আসছি, আমার জন্মভূমি, আমার বাড়ীতে আছি, আমার নামে বাড়ী, মিউনিসিপ্যাল ট্যাক্স আমি দেই, আমাকে জোর করে তাড়াইতে পারবানা এখান থেকে। আমাকে এখান থেকে বাড়াবার জন্য চেষ্টা করেছে, পাকিস্তান হাইকমিশনকে রিকোয়েস্ট করেছে তাকে আপনার নেন। উনি যাইতে না চাইলে আমরা নেব কেন?

১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি গোলাম আযমসহ বেশ কজন স্বাধীনতা বিরোধী রাজনীতিবিদের বিষয় সম্পত্তি ক্রোক করার আদেশ নামা ছাপা হয়। এদের স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুর ৩টার মধ্যে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। গোলামকে বলা হয় ব্রাক্ষণবাড়িয়া মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা ঢাকা সদর (দক্ষিণ) আদালতে উপস্থিত হতে। একই আদেশে তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়।যেই সম্পত্তি সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে, সেই সম্পত্তি কোন যাদুবলে গোলাম ফিরে পেলো, কিভাবে তার মিউনিসিপালিটি ট্যাক্স, খাজনা গোলামের নামে দেওয়া হতো এইসব নিঃসন্দেহে আলাদা গবেষণার দাবি রাখে। তবে ‘৯২তে জামাত যখন একজন পাকিস্তানী পাসপোর্টধারী গোলামকে তাদের আমির হিসেবে আনুষ্ঠানিক নিয়োগ দেয়, তখনই জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক-দালাল নির্মুল কমিটি গঠিত হয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নতুন করে বেগ পায়।

গোলামের নাগরিকত্ব মামলা নিয়ে আর লিখলাম না। এ বিষয়ে কিছু অপপ্রচারের যাবতীয় ভ্রান্তি ঘুচিয়ে এবং চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়ে পোস্ট দিয়েছেন রায়হান রশীদ ও নিঝুম মজুমদার ।

সাংবাদিকঃ স্যার, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যারা এখন বলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি, এই দুইটা শক্তির মধ্যে আসলে পার্থক্য কি ছিল? কারা কোন ভূমিকায় ছিল?

গোলাম আযমঃ রাজাকারদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হতো, কারন তারা পাহারা দিত, তাদেরকে মারতে আসতো, আমরা তো সেখানে কোন ভূমিকা পালন করার মতো অবস্থানে ছিলাম না। ঐ যে, কোন কমপ্লেইন আসলে, কমপ্লেইন নিয়া তাদের কাছে ধরনা দেয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারতাম না।

হাহাহাহা। কি বলবো! কিছু বলার নাই। উপরের ছবিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে গোলামের বক্তব্যে হাস্যকর একটা ছবি মিলে যা গোলামের আত্মজীবনী থেকে নেওয়া।

সাংবাদিকঃ আপনি তো বললেন যে, আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি সোমবার দেয়া হলো, সেটার পেক্ষিতে আপনি কি আপনার মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকার জন্য অনুতপ্ত কিনা, জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোন বিষয় আছে কি না?

গোলাম আযমঃ দেখেন, মুক্তিযুদ্ধে কেন অংশগ্রহণ করতে পারলাম না, যদি, পাকিস্তান হওয়ার পর থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে যে আচরণ ভারত করেছে তাতে ভারতকে বন্ধু মনে করার কোন কারন ছিল না। যখন বাংলাদেশী জনগণের প্রতিনিধি আওয়ামী লীগের নেতারা ভারতে গিয়া ইন্দিরা গান্ধীর কাছে ধর্ণা দিল, যে আমাদেরকে স্বাধীন করার জন্য আপনার সাহায্য করেন, তখন আমরা মহা চিন্তায় পরলাম, যে ভারত তো আমাদেরকে স্বাধীন করতে আসবে না, তারা আসবে তাদের স্বার্থে। তারা আসছে তাদের স্বার্থে, সে স্বার্থটা কি, এক নম্বর স্বার্থ হলো তাদের চীর দুশমন পাকিস্তানকে দূর্বল করা। যদি পাকিস্তান থেকে ইস্ট পাকিস্তানকে আলাদা করতে পারে, তবে পাকিস্তান দূর্বল হলো। দুই নম্বর, পাকিস্তান ভারতের বাইরে, আর আমরা ভারতের পেটের ভিতরে, চারিদিক ভারত, দক্ষিণ দিকেও বঙ্গোপসাগর তাদের হাতে, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ তাদের হাতে, আমরা যদি তাদের থেকে আলাদা হই, তাহলে আমরা স্বাধীন স্বত্ত্বা রক্ষা করে চলতে পারবো না, আমরা ভারতের আধিপত্যের অধীন থাকতে বাধ্য হবো। ইন্ডিয়ার স্বার্থ তিনটা ছিল, একটা হলো পাকিস্তানকে দূর্বল করা, আর আমার উপর আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ গ্রহণ করা, আর পাকিস্তানের মেজরিটি এলাকাটাকে তাদের পণ্যের মার্কেট বানানো। তারা আমাদের স্বাধীনতার জন্য আসে নাই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তাদের যে আচরণ, এতদ্বারা কি প্রমাণ হয় আমাদের স্বাধীনতা তারা চায়? আমাদের বর্ডারে তারা পাখির মতো মানুষ মারছে, জনগণ প্রতিবাদ করছে কিন্তু সরকার প্রতিবাদ করে না।

সাংবাদিকঃ না, আপনি অনুতপ্ত কি না? মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগের কথা বলা হয়েছে .

গোলাম আযমঃ আমি তো বললাম যে এসব গুলি অভিযোগ নয়, অপবাদ। আমার বিরুদ্ধে এমন কোন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে না যে মানবতাবিরোধী কোন কাজ আমি করেছি, জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মতো কোন অপরাধ করেছি। এরকম কিছুই তারা পাবে না। হ্যারাস করবে, আসলে তো বিচারের কি রায় হবে আগেই ফয়সালা হইয়া আছে। এটা তো একটা প্রহসন মাত্র, বিচারের নামে অভিনয় চলছে। এই যে কয়দিন আগেও পাটমন্ত্রী বলেনাই, এ বিচারের কোন দরকার নাই, ফাঁসি দিয়া ফেল, বলেছে কি না?

সাংবাদিকঃ স্যার সর্বশেষ প্রশ্ন স্যার, মাগরিবের আজান দেবে, যে আমরা যেটা জানছি যে সবাই আশা করছে বা আপনি হয়তো অনুমান করছেন যে হয়তো আপনি গ্রেফতার হয়ে যেতে পারেন, আপনি মানসিকভাবে এখন প্রস্তুত কি না গ্রেফতারের জন্য?

গোলাম আযমঃ জীবনে বহুবার গ্রেফতার হয়েছি। আর মোমেন তো মৃত্যুকে ভয় করে না। আর যদি অন্যায়ভাবে মৃত্যু দেয়া হয়, তাহলে শহীদ হওয়ার গৌরব পাওয়া যায়। সে হিসাবে, ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসাবে, শাহাদাতের কামনা করি। সুতরাং ভয় কিসের? আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় করা তো জায়েজই না। আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় করার অনুমতি নাই।

ভারত জুজু দেখিয়ে একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীতা করে আসছে জামাত। উপরের কথাবার্তায় একাত্তরে তাদের অবস্থান জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছে গোলাম একই অজুহাতে। মাথায় টুপি পড়ে চালিয়ে গেছে জঘন্য মিথ্যাচার। সেটা ইসলামের নামে! অত্যন্ত নীচু সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গী সম্পন্ন গোলামের ভারত সম্পর্কে মনোভাব ৭১-এ যা ছিলো, এখনও তাই আছে। বরং তা সংক্রমিত হয়েছে তার সমর্থকদের মাঝে। নানা ছুতোয় ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ এবং হিংসা জারি রেখেই এই স্বাধীন বাংলাদেশে পায়ের নীচে জমিন শক্ত রেখেছে গোলাম ও তার উত্তরসূরীরা। প্রগতিশীল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী রাজনীতিবিদ এবং জনগনও তাদের চোখে ভারতের দালাল। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামার পর ভারতীয় দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করেছিলো জামাতে ইসলামী। সেই একই কমিটি আবারও নতুন করে জন্মলাভ করেছে ব্লগ ও ফেসবুকে এই জামাতিদের ঔরষে। সময় এসেছে এদের মূলোৎপাটনের। যুদ্ধটা শেষ করার। আর তা গোলাম ও তার অনুসারীদের মানবতাবিরোধী অপরাধের সফল বিচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই সম্ভব। আমরা আশাবাদী। এবং ইসলামে কোনো মোনাফেকের জন্য শহীদি দরজা রাখেননি মহান আল্লাহতায়ালা।

পাদটীকা: গোটা সাক্ষাতকারে পরতে পরতে মিথ্যার ভিড়ে একটাই সত্য উচ্চারণ গোলামের: জামাতের হেডকোয়ার্টার তখনও ছিলো লাহোর, এখনও লাহোর।