গোলাম নামা: আত্মপক্ষ সমর্থনের নামে ব্যাপক মিথ্যাচার-৪
সাংবাদিকঃ মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসে আপনার ভূমিকা কি ছিল এটা যদি একটু…
গোলাম আযমঃ ঐ যে বললাম, জনগনের যদ্দুর সেবা করা সম্ভব করেছি, বিশ্রাম নিতে পারি নাই, লোক এসে বাড়ী ভর্তি। মানে একটু হার্টে প্রব্লেম দেখা দিল, ডাক্তার বললো যে আপনার বয়স চল্লিশ পার হয়ে গেছে এই সময় আপনি দুপুরের খাওয়ার পর অন্তত এক ঘন্টা শুয়ে থাকবেন, যদি ঘুমাইতে সময় নাও পান শুয়ে থাকবেন। শুইবারও সময় পাচ্ছি না।
জনগণের সেবার ধরণ সম্পর্কে আগের পর্বেই প্রমাণসহ বিস্তারিত বলা হয়েছে, তাই নতুন করে আর পুনরাবৃত্তিতে গেলাম না।
সাংবাদিকঃ স্যার, কালকে অভিযোগে তারা এটা বলেছেন যে, শান্তি কমিটি গঠনের পর আপনারা রাজাকার বাহিনী, আল-বদর বাহিনী, আল-শামস বাহিনী এগুলি গঠন করে…
গোলাম আযমঃ না, এগুলি শান্তি বাহিনী (কমিটি) গঠন করে নাই। এগুলি গঠন করেছে সরকার। এখন যেমন পুলিশের সহকারী আছে না আনছার, এই আনছার হিসেবে পুলিশের সহকারী হিসেবে তারা এই বাহিনীগুলি গঠন করেছে। এখন ইউএনও যাদেরকে বলে, তখন এদের নাম ছিল সার্কেল অফিসার। এই সার্কেল অফিসারদের মার্ধমে ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বোর্ড ঢোল পিটিয়ে লোক রিক্রুট করেছে। সব রকম লোক গিয়েছে, কিছু পয়সা পাবে, বেকার লোক, বেকার যুবকরা সবাই গিয়েছে। এবং এতো পুলিশ পাবে কোথায়? প্রতি পুল, প্রতিটা পুলে পাহারা, কারন, মুক্তিযোদ্ধারা এসে পুল উড়ায়া দেয়, উড়ায়া দিলে পরে গ্রামটা জ্বালায়া দিয়া যায় আর্মি। সেজন্য তারা পুল পাহারা দেবার জন্য রাজাকার ব্যবহার করেছে, এই রেডিও টেলিভিশন পাহারা দেবার জন্য এত পুলিশ পাবে কোথায় সেজন্য পুলিশের সহকারী হিসেবে এই ফোর্সটা তারা গঠন করেছিল। বর্তমানে যেমন আনসার পুলিশের সহযোগি, এরকম একটা ফোর্স তারা করেছিল।
রাজাকারদের কারা রিক্রুট করতো এবং শান্তি কমিটির প্রশাসনিক মর্যাদা আগের পর্বগুলোয় প্রমাণসহ দাখিলের পর গোলামের এই মিথ্যাচার নিশ্চয়ই আমলে নেবেন না পাঠক। বরং উপরের বর্ণনার বাইরে রাজাকার বিষয়ে তার লেখা আত্মজীবনিতে হাস্যকর একটা বর্ণনা দিয়েছে গোলাম। রাজাকারদের অস্ত্র ছিলো শুধু লাঠি! মাঝে মাঝে পুল-টুল পাহারা দেওয়ার সময় তাদের হাতে বন্দুক দেওয়া হতো। গোলামের অজস্র মিথ্যের একটি এটিও। বার্তাসংস্থার এপিপির বরাতে (দৈনিক ইত্তেফাকে ২ ডিসেম্বর প্রকাশিত) এক খবরে ১ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে এই গোলামই বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছে মুক্তিবাহিনীকে মোকাবেলার জন্য রাজাকাররাই যথেষ্ট। লাঠি দিয়ে তো আর বুলেট ঠেকানো যায় না! সংগ্রাম পত্রিকায় এর আগে ৭ নভেম্বর এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয় এদেশে সেনাবাহিনীর পরই রাজাকারদের স্থান। এই দুই শাখা আলবদর ও আলশামসের উপর এদেশের ভবিষ্যত অনেকখানি নির্ভর করছে।
সাংবাদিকঃ আগামী বুধবার বুদ্ধিজীবী হত্যার ৪০ বছর পার হবে এবং মুক্তিযুদ্ধে সব যে হত্যাকান্ডগুলি হয়েছে সারা বাংলাদেশে সোমবার যে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে আপনার বিরুদ্ধে সবকিছুর জন্যই আপনাকে দায়ী করা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর আমীর হিসাবে আপনি এটার জন্য দায়ী।
গোলাম আযমঃ আমিই সরকারে ছিলাম আর কি! সরকার আমি পরিচালনা করছিলাম!পাকিস্তান আর্মি কি করলো তাহলে? পাকিস্তান আর্মি আমার হুকুমে কাজ করতো?
সাংবাদিকঃ তারা বলেছে যে আপনার সহযোগিতা, আপনার পরামর্শ অনুযায়ী তারা কাজ করেছে।
গোলাম আযমঃ এই কথা প্রমাণ করুন। এটা তাদের দায়িত্ব প্রমাণ করার।
সাংবাদিকঃ আপনার কি কখনো মনে হয় যে মুক্তিযুদ্ধের এই সময়টায় আপনার কর্মকান্ডটা ভুল ছিল?
গোলাম আযমঃ না, আমি তো এমন কোন কাজ করি নাই যেটা নাকি করা উচিত ছিল না বলে আমি মনে করি।
সংবাদিকঃ স্যার বিষয়টা এমন না, বিষয়টা হচ্ছে যে, একাত্তরে আপনার ভূমিকা নিয়ে অনেক অনেক কথা বলে, অনেকে অনেক বিষয় বলে, হয়তো আমরা বর্তমান যে প্রজন্ম অনেক কিছুই জানি না, আসলে আপনি আপনার অবস্থান থেকে আপনার সম্পর্কে কি বলবেন?
গোলাম আযমঃ এটাই তো বলছি, আমাদের আর কিছুই করার ক্ষমতা ছিল না। জনগণ আমাদের কাছে কমপ্লেইন করেছে আর্মির ব্যাপারে, এবং আমরা যেটুকু পেরেছি সাধ্যমতো সহায়তা করেছি, যতটুকু হেল্প করতে পেরেছি।
গোলামের এসব মিথ্যাচারের জবাব আগের পর্বগুলোতেই দেওয়া হয়ে গেছে। আফসোস একটাই যে তার কাছে মুক্তিযুদ্ধকালে সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া জনগনের কারো সেই বুকের পাটা নেই যে কোনো গনমাধ্যমে এসে বলে যে সে বা তারা একাত্তরে গোলাম আযমের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছিলো। সূর্য মিয়া না হয় মারা গেছে। তার চার যুবতী মেয়ে যারা গোলামের বাড়িতে এবং প্রতিবেশী হিসেবে মাসের পর মাস কাটালো তারা কি এমন কোনো বিবৃতি দিতে পারে না? হাজার হোক শেখ মুজিবের আত্মীয় তারা, ক্ষমতায় এখন শেখ মুজিবের মেয়ে শেখ হাসিনা।
সাংবাদিকঃ স্যার, তারা কিন্তু এটাও বলেছে যে, ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পর্যন্ত ঐ সময় যে হত্যাকান্ডগুলি ঘটেছে সবগুলির পেছনে আপনার প্রত্যক্ষ একটা সহযোগিতা ছিল।
গোলাম আযমঃ আশ্চর্য কথা, এগুলি এতদিনে বলা হচ্ছে কেন? এগুলি তারা যখন ক্ষমতায় আসলো তখন তো তারা বলতে পারতো। এতো বছর পরে মনে হলো কেন? এই প্রশ্নের জবাব কি? এতো বছর পরে এ কথা মনে আসলো কেন তাদের?
সাংবাদিকঃ তদন্ত কর্মকর্তা দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে এই প্রতিবেদন দাখিল করলো আর কি, অভিযোগপত্র।
গোলাম আযমঃ তদন্ত সংস্থা তো তাদের লোক দিয়েই করছে এবং তারা তাদের লোক দিয়েই মিথ্যা স্বাক্ষী দেয়াচ্ছে এবং অনুমান করে সবকিছুর জন্য কাউকে দায়ী করছে। এগুলি কোর্টে একটাও প্রমাণ করতে পারবে না।
সাংবাদিকঃ জি, আরেকটা প্রশ্ন গতকালের অভিযোগেই বলছে যে আপনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছেন, সংবাদ সম্মেলন করেছেন, রাওয়ালপিন্ডি করাচী এইসব জায়গাতেও আপনি সংবাদ সম্মেলন এবং দলের বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী, ভারতের চর, অনুপ্রবেশকারী বলেছেন এটা সোমবার দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে।
গোলাম আযমঃ প্রমাণ করুক। আমিতো চ্যালেঞ্জ করে বলছি প্রমাণ করুক।
জ্ঞানপাপী সাজার এই অভিনয়টা খুবই কাঁচা হয়েছে গোলামের। এই বাংলাদেশে প্রতিটি শিশু বুঝতে শুরু করার সময়ই জেনে যায় এই দেশের স্বাধীনতা কাদের হাত ধরে এসেছে, কারা এর বিরোধীতা করেছে। এরপর সময়ে কারো মগজধোলাই হলে সেটা ভিন্ন কথা। স্বাধীনতার পরপরই বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডের জন্য আলাদাভাবেই জামাতে ইসলামী এবং এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতাদের অভিযুক্ত করা হয়। অনেকে ধরা পড়ে, দোষ স্বীকার করে। অনেকে দীর্ঘদিন পলাতক থাকে, জিয়া ক্ষমতা দখলের পর ফেরে তারা বুক ফুলিয়ে। এখন গোলাম আযম যেসব বক্তৃতা বিবৃতি দিয়েছে তার প্রমাণ কেনো খুজছে সেটাই বোঝা গেলো না। পত্রিকায় ছাপা হওয়ার পর এত বছর কেটে গেছে বলে সেগুলোর অস্তিত্বই নেই বলে কি আত্মবিশ্বাসী গোলাম! প্রতিটি সংখ্যা প্রতিটি তারিখ প্রতিটি খবর সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তদন্ত কমিটিকে দেওয়া হয়েছে। কোর্টে এসব প্রমাণ গ্রহণ করা হবে বলেই এটার নাম স্পেশাল ট্রাইবুনাল জনাব। আর কি কারণে তার দায় গোলামকে নিতে হবে প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্বে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিকঃ এও বলেছে যে আপনি ঐ সময়কার রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী তাদের যে প্রশিক্ষণ শিবির সেখানে আপনি গিয়ে, মোহাম্মদপুরে সেপ্টেম্বরে ঘটনা, আপনি দেখেছেন…
গোলাম আযমঃ আমি শুধু এক জায়গায় গিয়েছিলাম তাদের বলার জন্য যে যদি নাকি নির্দোষ লোকের বিরুদ্ধে তোমরা কর তাহলে আল্লাহর সাহায্য পাবা না। আমি যখন পাকিস্তান আর্মির যাদের সাথে কথা বলি তাদেরকে বলেছি যে সাধারণ জনগনকে, নিরপরাধ জনগনকে যেন নিপীড়ন না করা হয়, ঠিক তেমনি তাদেরকেও একই কথা বলেছি। একদিন গেছি, একবার। আর কোথাও কোন..
সাংবাদিকের জায়গায় আমি থাকলে সম্পূরক প্রশ্ন করতাম নির্দোষ লোক বলতে গোলাম কি বুঝে? রাজাকার বাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছে স্বাধীনতাপন্থীদের খুজে বের করে হত্যা করার জন্য। গোলাম যাদের দুষ্কৃতিকারী, ভারতের চর বলতো, তাদেরই আমরা মুক্তিযোদ্ধা বলে জানি। আর এর উদাহরণ সেসময় প্রকাশিত প্রতিটি পত্রিকায় পাতায় পাতায় রয়ে গেছে। ১৬ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর ফিজিকাল ট্রেনিং সেন্টারে আল-বদর সদর দপ্তরে রাজাকারদের উদ্দেশ্যে এক বক্তৃতায় এই শত্রু চিহ্নিত করে গোলাম বলে, ‘যারা পাকিস্তান ও ইসলামের দুশমন, যারা আমাদের উপর আঘাত হানে, যারা হাজার হাজার আলেমকে হত্যা করেছে, এমনকি নবীর বংশধরদের রক্তে এদেশের মাটি রঞ্জিত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম। (প্রসঙ্গত এখানে নবীর বংশধরদের রক্তে রঞ্জিত করার কথা গোলাম বলেছে, সেটা মওলানা মাদানি প্রসঙ্গে যাকে ঢাকার অদূরে সাভারে মুক্তিযোদ্ধারা এক জনসভায় গুলি করে হত্যা করে। ওই লোক নবীর বংশধর কোন হিসেবে তার উল্লেখ পাওয়া যায়নি কোথাও তবে বলা হয় সে বা তার পূর্বপুরুষরা মদিনা থেকে এদেশে ইসলাম প্রচার করতে এসে থেকে গেছে। মদিনার সবাই যদি নবীর বংশধর হতো তাহলে তো কথাই ছিলো না)। একই বক্তৃতায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছে গোলাম: বাইরের শত্রুর চেয়ে ঘরের শত্রুই বেশী বিপজ্জনক। আমাদের ঘরেই এখন অসংখ্য শত্রু তৈরি হয়েছে।… তোমরা আভ্যন্তরীন দুশমনদের দমন করার কাজে যত তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসতে পারবে, তত তাড়াতাড়ি সেনাবাহিনী দেশকে শত্রুমুক্ত করার কাজে ফিরে যেতে পারবে।’ আগে ও পরের অনেক বক্তৃতা-বিবৃতিতে স্পষ্ট হয়ে গেছে এই ঘরের শত্রু বলতে বুদ্ধিজীবিদেরই বুঝিয়েছিলো গোলাম। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্বে।
সাংবাদিকঃ আরেকটা যেটা বলা হয় যে মুক্তিযুদ্ধের পরে আপনি লন্ডন গিয়েছিলেন, সেখানে পূর্ব পাকিস্তান পূনরুদ্ধার কমিটি গঠন করলেন, এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন..
গোলাম আযমঃ আমি চ্যালেঞ্জ করছি এগুলো সব মিথ্যা কথা। অপবাদ।
সাংবাদিকঃ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্নদেশে নাকি আপনি বলেছেন যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়ার জন্য?
গোলম আযমঃ ব্যারিস্টার আব্বাস ছিলেন একজন পাবনার। আরো কিছু এ দেশী ব্যারিস্টার সেখানে তারা পূর্ব পাকিস্তান সরকার কায়েম করেছিল এবং আমাকে মন্ত্রী বানানোর জন্য তারা দাওয়াত দিয়েছিল আমি তার জবাবও দেইনি।
সাংবাদিকঃ কোন সময় এটা?
গোলাম আযমঃ এটা চুয়াত্তর হবে। চুয়াত্তর কি পচাত্তর সালে।
সাংবাদিকঃ বঙ্গবন্ধুর সরকার?
গোলাম আযমঃ চুয়াত্তর কি পচাত্তর সালে ঐ বাংলাদেশী যারা লন্ডনে আছে ইংল্যান্ডে আছে তাদের একটা গ্রুপ তারা ব্যারিস্টার, এ্যাডভোকেট, একজনের নাম মনে আছে, যিনি চীফ ছিলেন এটার, বাড়ী পাবনা, ব্যারিস্টার আব্বাস। আমাকে চিঠি দিল, আমি কোন জবাবও দেই নাই। যে কি পাগলামী, এক ছিল সেটা এক রাখা গেল না, এখন পূর্ব পাকিস্তানে তারা আলাদা একটা সরকার গঠন করবে এই পাগলামীতে আমি নাই।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গোলাম আযম জামাতে ইসলামীকে নিয়ে আন্দোলনে নামে।‘বাংলাদেশ নামঞ্জুর (বাংলাদেশ মানি না)’ নামের এই আন্দোলনের পাশাপাশি সে গঠন করে ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি’। এই কমিটির প্যাডে নিয়মিত চাদা আদায় করে সে। পাশাপাশি সৌদিআরবসহ ইসলামী দেশগুলোতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ায়। এসব প্রচারণার মধ্যে ছিলো ভারতের সহযোগিতায় পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মহীন রাষ্ট্র কায়েম হয়েছে, সেখানে সব মসজিদ ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে, মুসলমানদের ধর্মচর্চা করতে দেওয়া হচ্ছে না। এর একজন প্রত্যক্ষদর্শী মওলানা মিসবাহউর রহমান। সৌদি আরবে বাদশাহর দরবারে গোলাম কি ধরণের প্রচারণা চালাতো তার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি নিচের ফুটেজে।
স্বাধীন বাংলাদেশ বিরোধী এই কার্যক্রমের এক পর্যায়ে গোলাম লন্ডন আসে। কারণ পাকিস্তানে তার অবস্থান বিপন্ন হয়ে পড়েছিলো। ১৯৭২ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে হ্বজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পিআইএর একটি বিমানে ওঠে গোলামসহ কয়েকজন জামাত নেতাকে টেনে হেচড়ে প্লেন থেকে নামায় মওলানা কাওসার নিয়াজির নেতৃত্বে কয়েকজন পাকিস্তানী রাজনীতিবিদ। পরে মওদুদী সেখানে হাজির হয়ে ওই নেতাদের অনুরোধ করে জামাত নেতাদের সৌদিআরব যেতে দিতে। অনুরোধ মেনে গোলামসহ বাকিদের যেতে দেওয়া হয়। এই মাওলানা কাওসারের ওপর ব্যাপক রাগ ঝেড়েছে গোলাম তার আত্মজীবনীতে। যাহোক, লন্ডন থেকে জামাতের মুখপত্র হিসেবে সংগ্রাম পত্রিকাটি সে সাপ্তাহিক হিসেবে প্রকাশ করা শুরু করে গোলাম। ১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রা গোলামের কার্যক্রম নিয়ে চাঞ্চল্যকর একটি প্রতিবেদন ছাপায়। এতে লেখা হয়,
১৯৭৪ সালের শুরুর দিকে ইস্ট লন্ডনের একটি বাড়িতে এক কমিটি মিটিংয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী একটি নীলনক্সা প্রণয়ন করে সে। একই বৈঠকে অংশ নেয়া কয়েকজন পাকিস্তানী সূত্র তা নিশ্চিত করে। বৈঠকে ছিল : এটি সাদী, তোয়াহা বিন হাবিব, আলি হোসাইন, ব্যারিস্টার আখতারউদ্দিন, মেহের আলী ও ড. তালুকদার। পাকিস্তানী নাগরিকদের মধ্যে ছিল সদ্য প্রয়াত মাহমুদ আলী। বৈঠকের সভাপতি গোলাম বলে, লন্ডন থেকে আমাদের কার্যক্রম চালানোটা কঠিন হবে। তাই আমাদের কাউকে দেশে ফিরে যেতে হবে। আমাদের ঝুঁকি নিতেই হবে, নয়তো ফায়দা হবে না। তবে দেশে ফিরলে যোগাযোগের মধ্যে থাকতে পারবে, কারণ আমার লোকদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক। উপস্থিতদের মাঝে একটি লিফলেট ধরিয়ে দিয়ে গোলাম বলে, এই লিফলেটটি বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে বিলি করতে হবে। জনগন আমাদের সাথে আছে।
কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে লিফলেটে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি কনফেডারেশন গঠনের কথা লেখা ছিল। আরেকটি সূত্র বলেছে মসজিদ ব্যবহার করে গোপনে একটি ইসলামি বিপ্লব সংঘটনের কথা বলা হয়েছিল এতে। ঢাকার আশেপাশে লিফলেটধারী বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গোলাম অবশ্য এই পরিকল্পনায় পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সমর্থন আছে বলে জানায়। (জিয়ার মতো) গোলামও বলেছিল, টাকা পয়সা কোনো সমস্যা না (মানি ইজ নো প্রবলেম)।শোনা যায় যুদ্ধকালে বাংলাদেশে ক্ষতিগ্রস্থ মসজিদগুলো নির্মাণের অজুহাতে গোলাম সাড়ে ৪ কোটি রিয়াল সংগ্রহ করেছিল সৌদি আরব থেকে। ধূর্ত গোলাম সে টাকার একটা বড় অংশ খরচ করে লন্ডনের ম্যানচেস্টারে একটি বাড়ি কিনে। তার ছেলে মেহেদি হাসান এখন সে বাড়িতে থাকে।
যুদ্ধের পর বাংলাদেশ সরকার মৌলবাদ ও দালালদের প্রভাব উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়, গোলামের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় তখন। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ও লন্ডনে বসবাসের পর সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গনতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে রাজনীতি উন্মুক্ত করে দিলে এর আগে নিষিদ্ধ ইসলামিক দলগুলো মাঠে নামে। গোলামকে অস্থায়ী ভিসায় বাংলাদেশ আসার সুযোগ দেয়া হয়।
সম্প্রতি উইকিপিডিয়ায় গোলাম আযম সংক্রান্ত প্রতিটি লিংকেই ব্যাপক এডিটিং চালিয়েছে জামাত শিবির সমর্থকরা। গোলামের পেইজেস্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশ নিয়ে তার অপপ্রচার ও কর্মকান্ড সম্পর্কে এডিটিংয়ের আগে নীচের কথাগুলো ছিলো:
According to Prothom Alo, three intellectuals submitted allegations of war crimes against Ghulam Azam. The activities regarding Bengali culture were submitted by Syed Shamsul Huq, alleged war crimes during 1971 were detailed by Borhanuddin Khan Jahangir and his pro-Pakistan lobbying after 1971 was detailed by Anisuzzaman.[5] Notable pro-Pakistan lobbying of Ghulam Azam after 1971 are as follows:[5]
1. After the liberation of Bangladesh Azam, staying in Pakistan, created an organization named Purbo Pakistan Punoruddhar Committee (East Pakistan Revival Committee) along with anti-Bangladesh activists like Mahmud Ali. Azam tried to strengthen the international movement to re-establish East Pakistan. Accordingly he kept claiming himself as the Ameer of East Pakistan Jamaat-e-Islami many years after the elimination of East Pakistan.
2. In 1972, Azam formed Purbo Pakistan Punoruddhar Committee in London and conspired with others to replace Bangladesh with East Pakistan. In 1973, he lectured against Bangladesh in the annual conference of Federation of Students’ Islamic Societies held in Manchester and conference of UK Islamic Commission held in Lester. In 1974, he arranged a meeting of Purbo Pakistan Punoruddhar Committee with Pakistanis like Mahmud Ali. As they had already failed to establish a Pakistan within Bangladesh, they decided to lead their movement towards the formation of a confederation combining Bangladesh and Pakistan. In this meeting Azam explained the necessity of working for the movement within Bangladesh though it was a bit risky then. In, 1977 in a meeting held in the Holy Trinity Church College, Azam expressed it again. He came to Bangladesh in 1978 with a Pakistani passport and Bangladeshi visa only to make his dream of Pakistan-Bangladesh confederation come true.
3. Ghulam Azam participated in the International Islamic Youth Conference held in Riyad in 1972 and begged the help of all Muslim countries to re-establish East Pakistan. From 1973 to 1976 he met Saudi King seven times and asked him not to acknowledge Bangladesh and never to help this country by any means. He lectured against Bangladesh again in the international conference arranged by Rabeta-e-Alam Al-Islami in Mecca in 1974 and at King Abdul Aziz University in 1977.
4. Azam lobbied against the acknowledgment of new born Bangladesh in the conference of Foreign ministers of the Muslim countries held in Benghazi in 1973. In the same year he lectured in the Islamic Youth Conference held in Tripoli which was clearly against the independence and sovereignty of Bangladesh.
5. In 1973 Ghulam Azam urged everybody to participate in the movement of combining Bangladesh with Pakistan in the annual conference of Muslim Students’ Association of America and Canada held at Michigan State University.
6. Azam lectured against Bangladesh again in 1977, in the international conference of Islamic Federation of Students’ Organizations held at Istanbul.[5]
আরেকটা উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো ৭৩ সালে ভুট্টো যখন বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিবেচনা করছেন, তখন এ ব্যাপারে কয়েকটি জনসভা করে মতামত যাচাই করেন। তখন জামাতিদের ‘না মঞ্জুর’এর বিরুদ্ধে এক জনসভায় স্পষ্টই বলেন ‘সুয়োরকে বাচ্চা, তুম জাহান্নামমে যাও’ (এর আগে এটি বাঙালীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে ধারণা করে ভুলভাবে ব্যবহৃত হলেও পরে যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এবং কথাগুলো শুনলে তার প্রমাণ মিলে)
ভিডিওটি প্রসঙ্গে আসলে দুই ধরণের বক্তব্য মিলে। ৩ জানুয়ারি ১৯৭৩ সালের এক সমাবেশে দেওয়া ভিডিওটি প্রসঙ্গে ইউটিউবে বলা হয়: Words cannot describe how great that beat is which segues into Z A Bhutto’s speech. Remixing that speech with that beat kicked so much ass. A movement had been launched called the “Na Manzoor” campaign to oppose the recognition of Bangladesh. And to them he was shouting “Jahannum Mein Jaein”. And do you know who the prime mover was to whom he was saying “Jahannum Mein Jaein”? The Jamat-e-Islami. That man kicked some serious ass.
অন্যদিকে ভুট্টোর নিজস্ব ওয়েবসাইটে এর পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যায় ভিন্নমত পাওয়া গেছে।
(চলবে)