সেই দিন আর নাইরে মামু, ক’বি বাঙালীর মাথায় কাঠাল ভাইঙ্গা খামু…

সেই দিন আর নাইরে মামু, ক’বি বাঙালীর মাথায় কাঠাল ভাইঙ্গা খামু…

এই তো মাত্র কয়দিন আগে মোনাফেক জামায়াতে ইসলাম ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের মোনাফেকির প্রমাণ দিলাম। তবে তারা কি থামে, নিত্যনতুন মিথ্যাচার, গিবত আর অপপ্রচারে তারা মশগুল। ওই যে বলছিলাম কুফরি কালামের চর্চা করে। যাহোক স্বল্প কথায় দেখি তাদের নতুন কাহিনী। আলহামদুলিল্লাহ, এইবার তাদের টার্গেট বেগম সাজেদা চৌধুরী। আর মানুষ পাইলো নারে ভাই, একটা অট্টহাসি আগে হাইসা নিই।

তো ছাগুদের বক্তব্য হইতেছে বর্তমান সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীসহ ১৯৭০এর নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে ৮৮ জন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও তার গভর্নর টিক্কা খানের সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তাদের সদস্যপদ বহাল করেছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ওই ৮৮ জন এমপির নাম, পিতার নাম, ঠিকানা ও সংসদীয় এলাকার উল্লেখ করে তালিকা প্রকাশ করেছিলো। ব্লা ব্লা ব্লা…

তো ঠিকাছে দেখা যাক তাইলে গেজেট নোটিফিকেশনে কি আছে। আরে তাইতো সাজেদা চৌধুরীর নাম দেখা যায় দেখি! তো ৭ আগস্ট প্রকাশিত গেজেট নোটিফিকেশন দেওয়া হইছে ঠিকাছে। এই সংক্রান্ত প্রেসনোট কি বলে?

৮ আগস্ট দৈনিক পাকিস্তানে এই সংক্রান্ত প্রেসনোটের ভাষা হইতেছে: বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের ৮৮ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যের আসন বহাল থাকবে এবং অন্যান্যদের তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ খন্ডনের সুযোগ দেওয়া হবে। আজ এখানে এক সরকারী প্রেসনোটে এ কথা ঘোষণা করা হয়।

প্রেসনোটে বলা হয়: এখানে উল্লেখযোগ্য ১৯৭১ সালের ২৮ জুন তারিখে প্রেসিডেন্ট তার বেতার ভাষণে বলেন যে তিনি রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তবে যারা অপরাধমূলক কাজ করেছেন, তারা ব্যতীত এ বিলুপ্ত পার্টির অপর এমএনএ ও এমপিএগন ব্যক্তিগতভাবে তাদের আসনে বহাল থাকবেন (অর্থাৎ স্বতন্ত্র স্ট্যাটাস দেওয়া হইবো তাগোরে)। সেইহেতু পাকিস্তান সরকার আজ বিলুপ্ত আওয়ামী লীগের যেসব নির্বাচিত এমএনএ জাতীয় সংসদের নবনির্বাচিত সদস্য হিসেবে তাদের আসনে বহাল থাকবেন, তাদের তালিকা ঘোষণা করেছেন। বিলুপ্ত আওয়ামী লীগের অপর সকল এমএনএ যাদের নাম এ তালিকায় উল্লিখিত হয়নি, তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে তাদেরকে দন্ডনীয় অপরাধমূলক কাজ সংক্রান্ত তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ নিজেদের খন্ডনের সুযোগ দেওয়া হবে। নবনির্বাচিত এমপিএদের ব্যাপারে পরে ঘোষণা দেওয়া হবে।…

জেনারেল রাও ফরমান আলীর নির্দেশিত এই প্রেসনোটে কোথায় বলা হইছে আওয়ামী লীগের ৮৮ জন আনুগত্য স্বীকার কইরা আসন বজায় রাখছে! কাডাল পাতা খাইয়া যা ইচ্ছা তাই লিখলেই তো হইবো না মামুরা।

একদম উপরে দেওয়া মর্নিং নিউজের খবরে ইংরেজিতেও একই কথা লিখা। প্রেসনোটের টেক্সট হাই রেজুলেশনে দিলাম পইড়া নিও মামুরা।

মজার ব্যাপার হইলো কয়দিন পর আরো ছয়জনরে মাফ কইরা সংখ্যাটা ৯৪ বানানো হইছে। কারণ কি, বাকি আসনগুলাতে জামাত-পিডিপি-নেজামে ইসলামীর নেতা পাওয়া যাইতেছিলো না নাকি? যাইবো না কেনো, তারা তো নতুন গভর্নর মালিকের অধীনে মন্ত্রীসভা পর্যন্ত গঠন কইরা ফেলছে একমাস পরই। কিন্তু কই আওয়ামী লীগের একজন সদস্যও তো সেই মন্ত্রীসভায় যোগ দিলো না। কেম্নে কি মামুরা?

আওয়ামী লীগের কোন ঠ্যাকা পড়ছে? এই ঘোষণা পাকিস্তান সরকারের। বঙ্গবন্ধূ শেখ মুজিবুর রহমানরে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা কইরা নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়া আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করছে ১২ এপ্রিল এবং তারা ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করছেন। ওই ঘোষণার পরই তো পূর্ব পাকিস্তান বইলা কোনো কিছুর অস্তিত্ব নাই। বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান হইয়া গেছে যুদ্ধটা। তাইলে ইয়াহিয়ার ঘোষণায় ঠ্যাং দিয়াও পোছার কথা না আওয়ামী লীগের।

তো ইয়াহিয়া এই চালটা দিয়া কি করতে চাইছে! এই ব্যাপারে ৫ সেপ্টেম্বর এক বেতার ভাষণে ক্লিয়ার করে দিছেন বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ:

জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের কিছু সংখ্যক প্রতিনিধির আসন বাতিল করে আর কিছু সংখ্যকের আসন বজায় রেখে ইয়াহিয়া কাকে ধোকা দিতে চাইছেন? তিনি এমনতর ভান করছেন যে, যাদের আসন বাতিল হয়নি, তারা বুঝি তার চক্রান্তের সমর্থক। জনসাধারণের সুস্পষ্ট অভিপ্রায়ই জাতির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতার উৎস। তারা কোনো ক্ষমতা দখলকারীর আজ্ঞাবহ নন এবং তার উদ্ভাবিত ফন্দি-ফিকিরে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। গত জুলাই মাসের সম্মেলনে এমএনএ ও এমপি এরা বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য অবিরাম সংগ্রামের প্রতিজ্ঞা পুনরায় ঘোষণা করেন। জনপ্রতিনিধিদের বিচার করার হাস্যকর প্রচেষ্টা কিংবা তাদের বিষয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রয়াস তাদের প্রতিজ্ঞা থেকে টলাতে পারবে না।

এইবার আসি বেগম সাজেদা চৌধুরীর অবস্থানে। বেগম সাজেদা চৌধুরী চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম-নোয়াখালী-চাঁদপুর অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হন, তার আসন এন,ই ১৬৫, মহিলা আসন-৩। মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকারে তার পেশাভিত্তিক ক্রমিক নং ছিলো ১৮২২, পদবী ছিলো ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা্ এবং দায়িত্বস্থল ছিলো আগরতলা মহিলা শরণার্থী শিবির, পরে তাকে আগরতলা নার্সিং প্রশিক্ষণ শিবিরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মুজিবনগর সরকারের দলিলপত্রে মহিলা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় সাজেদা চৌধুরীর নাম তিন নম্বরে আছে।

(সূত্র: মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান: এএসএম সামছুল আরেফিন, পৃষ্টা-১৩৩ ও ৩২৩)

মুক্তিযুদ্ধের পর ক্ষতিগ্রস্থা নারীদের পুনর্বাসনের জন্য একটি কমিশন করে বাংলাদেশ সরকার, সেখানে সাজেদাও ছিলেন। As the scope of the problem became ever more apparent and relief funds poured in from the largest UN-led relief operation ever organised up to then, the new government of Sheikh Mujibur Rahman, urged on by Ministers Budrunnessa Ahmad and Nurjahan Murshed,- set up a government structure to address not only the plight of raped women, but also that of the numerous women left destitute without family support — in a society where independent women were practically unknown.
The Bangladesh Women’s Rehabilitation Board (subsequently to become the Women’s Rehabilitation and Welfare Foundation) was formed on February 18, 1972 as a semi-autonomous organisation affiliated with the Ministry of Social Welfare. The 13-member governing board was headed by Justice K.M. Sobhan, a sitting Supreme Court judge, and consisted of prominent women political leaders and war widows.-
The board members were: Justice K.M. Sobhan, Budrunnessa Ahmad, Nurjahan Murshed, Sajeda Chowdhury, Momtaz Begum, Rafia Akhtar Dolly, Nilima Ibrahim, Sufia Kamal, Jahanara Rabbi, Lily Chowdhury, Basanti Guhathakurta, Mushfequa Mahmud and Abdul Awal (executive director), Bangaldesh Observer, “High Powered Body to Rehabilitate Women Victims,” February 24, 1972,.

প্রসঙ্গত ফেসবুকে বন্ধু লীনা দিলরুবা বেগম সাজেদা চৌধুরীর মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ঠতা নিয়া মন্তব্য করছিলেন:

১) সাজেদা চৌধুরী নিজে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। জোবরা ক্যাম্পে উনি যাদের সাথে ট্রেনিং নিয়েছিলেন তাদের কাছে সব গল্প শুনতে পারবেন।
২) উনার চাচাতো বোন, ফেরদৌসি প্রিয়ভাসিনী। আশাকরি উনার নামই উনাকে চেনাতে যথেষ্ট।
৩) সাজেদা চৌধুরীর স্বামী গোলাম আকবর ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী সরকারের কমার্স সেক্রেটারী।
৪) লে. সামাদ (বীর বিক্রম) উনার ফুপাতো ভাই।
৫) উনার খালাতো ভাই মেজর জিয়াউদ্দিন সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।
৬) বড় ছেলে আয়মান আকবর মুক্তিযোদ্ধা
৭) মেজ ছেলে সাজেদ আকবর মুক্তিযোদ্ধা।

লিস্ট একশ পর্যন্ত যাবে। আর লাগলে বইলেন।

এইবার একটা ছবি দেখাই। ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশরে স্বীকৃতি দেয়। তখন মুজিব নগর সরকারে রীতিমতো ঈদের আনন্দ। তিন মন্ত্রী কামরুজ্জামান, খন্দকার মোশতাক এবং মনসুর আলীরে মালা দিয়া বরণ করা হয়। সেই ছবির ডান দিকের মহিলাটা হচ্ছেন বেগম সাজেদা চৌধুরী। এর দশদিন পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

আফসুস, ছাগুরা আবারও ধরা খাইয়া গেলো!

লেখকঃ অমি রহমান পিয়াল