জয় বাংলা, পাকিস্তান জিন্দাবাদ নয়
[জন্মযুদ্ধ ‘৭১ প্রকল্পের পক্ষ থেকে দুটো ভিডিও আপলোড করেছি ইউটিউবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের অপপ্রচারে দুটো বড় ধারা ৭ মার্চ রেসকোর্সের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলা এবং ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণা নিয়ে সংশয়। এই বিভ্রান্তি কাটাতে প্রমাণ হিসেবে লাগসই ভিডিওগুলো। ]
পাকিস্তানের ইতিহাস নিয়ে ‘আজাদ পাকিস্তান’ নামের একটি পাকিস্তানী তথ্যচিত্রের (তৃতীয় পর্বের চতুর্থ অধ্যায়) থেকে নেওয়া হয়েছে নীচের ফুটেজটি। এই অধ্যায়ের শুরুতে ১৯৭১ সালের মার্চের ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনা করা হয়েছে। আমরা বেছে নিয়েছি ৭ মার্চের অংশটুকু। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক অবাঙালী, ঢাকার নবকুমার হাইস্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মোহাম্মদ ইকবাল। বিহারীদের উপর অত্যাচার প্রসঙ্গে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সেই কালজয়ী বক্তৃতার রেফারেন্স। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’-বক্তৃতার শেষ লাইনগুলো উর্দুতে অনুবাদ করেছেন শ্রোতাদের জন্য। এবং মুজিবের জাতীয়বাদী ঘৃণার প্রমাণ হিসেবে বলেছেন-বক্তৃতার শেষে যেখানে তার পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলার কথা, সেখানে উনি বললেন জয় বাংলা।
আফসোস যে পাকিস্তানীরা মুজিবের ৭ মার্চের বক্তৃতায় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ খুজে পায়নি বলে ক্ষিপ্ত, অথচ আমাদের দেশে কিছু কুলাঙ্গার যারা নিজেদের বাঙালী দাবি করে, তারা ঠিকই ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শুনেছে বলে মিথ্যাচার করে। সেই মিথ্যা দাবি আজও তারা প্রমাণ করতে পারেনি, বিশ্বের কোনো স্টুডিওতে মুজিবের ভাষণের রেকর্ডে পাকিস্তান জিন্দাবাদ নেই, এমনকি পাকিস্তানেও না। প্রিয় প্রজন্ম, অপ্রিয় হলেও সত্য এই দাবীদারদের মধ্যে অনেক বিখ্যাত লোকজন আছে। কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা বিভ্রান্তির জন্ম দেয় মিথ্যা কথা বলে, তারা কখনও আমাদের স্বাধীনতার পক্ষের নয়, তারা গোপন শত্রু যারা নিজেদের বিকিয়ে রেখেছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির কাছে। সময় হয়েছে সব অপপ্রচারের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়ার এবং এরকম দাবিদারদের চিহ্নিত করে এই প্রমাণটা দেখিয়ে জুতো মারার।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক তিনটি টিভি চ্যানেলের সন্ধ্যার খবরের সংকলন এই ফুটেজটি। এবিসি, সিবিএস এবং এনবিসি- তিনটি চ্যানেলই তাদের ব্রেকিং নিউজে বলে পূর্ব পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন,পূর্ব পাকিস্তান এখন থেকে বাংলাদেশ।শুরুতেই এবিসি নিউজের সংবাদ পাঠক জানাচ্ছেন: পূর্ব পাকিস্তানে দারিদ্রতা ও বঞ্চনাজনিত ঘৃণা অবশেষে গৃহযুদ্ধের রূপ নিয়েছে।পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রদেশটির স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন এবং এখন থেকে তা বাংলাদেশ বলে অভিহিত হবে। এরপর ঢাকা থেকে টেড কপেলের বরাতে এই স্বাধীনতার ঘোষনার নেপথ্য বর্ণনা।
সিবিএস নিউজে বলা হয়েছে: পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে,ঢাকা চট্টগ্রামসহ পূর্বপাকিস্তানের বড় শহরগুলোয় সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র এমনকি লাঠি ও পাথর নিয়ে লড়ছে জনগন। এক রেডিও ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্ব ফেরাতে সেনাবাহিনীকে যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নামে একটি গোপন রেডিও স্টেশন থেকে প্রচার করা হচ্ছে যে রহমান (শেখ মুজিব) বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। … এরপর বিদেশী সাংবাদিকদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ কিছু কথাবার্তা রয়েছে। “NOBODY CAN STOP IT” – “AUTONOMY – OOO DEFINITELY” – “I WANT MY RIGHT, I WANT MY EMANCIPATION” – “WHOCAN DO ANYTHING WHEN 75 MIL PEOPLE ARE UNITED BEHIND US” – “WHAT DAMN ARMY CAN DO? – WE DONT CARE FOR THEM” এনবিসি নিউজও ফরাসি টিভির ধারণ করা ওই অংশটি সহকারে গৃহযুদ্ধের খবর প্রচার করেছে।
আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা কে দিয়েছেন তা ইতিমধ্যেই সংবিধান ও উচ্চ আদালতের রায়ে নির্ধারিত ও মিমাংসিত। তারপরও হাওয়া ভবন ও মগবাজারে যৌথ প্রযোজনার সেই হাউকাউ বন্ধ নেই। মিথ্যাচার এবং ষড়যন্ত্র যাদের ভরসা, যারা নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে আমাদের ইতিহাস বিকৃত করে মনগড়া গল্প বানায়, তাদের মুখ চাইলেও তো বন্ধ করা যাবে না। তবে শুদ্ধ ইতিহাসের স্বার্থে প্রমাণগুলো রইলো। অন্তত দেখানো তো যাবে!