অগ্নিঝরা মার্চ: ১ মার্চ, ১৯৭১

অগ্নিঝরা মার্চ: ১ মার্চ, ১৯৭১


[আলোচিত ঘটনাবলীর পাশাপাশি কিছু ঘটনা হয়তো চাপা পড়ে যায়, গুরুত্ব দেওয়া হয় না, তেমন কিছু ঘটনা পাঠককে সংক্ষিপ্ত আকারে জানানোর চেষ্টা করবো। চমকপ্রদ হচ্ছে মার্চে চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধীদের অবস্থান কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পরবর্তী নয়মাসের উল্টোটাই ছিলো! গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার পাশাপাশি এগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করাটা জরুরি, কারণ সবার জানা প্রয়োজন কিভাবে রাতারাতি ভোলপাল্টে এরা সেনাবাহিনীর সেবাদাস বনে গেলো । ]

এদিনের হাইলাইট ইয়াহিয়া খানের ভাষণ, ৩ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। এরপর শুরু হয় উত্তাল এক মার্চ যা শেষমেষ গণহত্যা এবং প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়।

এদিন সকাল ১১টায় বটতলায় র‌্যালির কর্মসূচী ছিলো ইসলামী ছাত্র সংঘ ঢাকা ইউনিটের। নির্ধারিত সময় যাতে জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসে এবং ‘সকল ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিয়ে যাতে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের আছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়’ সেই আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতেই তাদের এই র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয় আগের সন্ধ্যায় পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে। আগের সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সভায় যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয় দলীয় কর্মীদের। ছয় দফা এবং ১১ দফা বাস্তবায়নে যে কোনো আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকার ঐক্যমত নিয়ে শেষ হয় সভা।

আন্তর্জাতিক একাদশ ও বিসিসিপি একাদশের মধ্যেকার টেস্ট ম্যাচ পণ্ড হয়ে যায় ইয়াহিয়ার ঘোষণার পরপরই। ঢাকা এবং আশেপাশের এলাকায় নামে মিছিলের ঢল। একই কাহিনী ঘটে দেশের অন্যান্য শহরগুলোতেও। সিলেট মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ক্লাশ বাদ দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। খুলনা শহীদ মিনার এবং যশোরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে সমবেত হয় প্রতিবাদী জনতা।

ঢাকা হাইকোর্ট বার এসোসিয়েশন থেকে মিছিল বের করে আইনজীবিরা শাহ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে। তারা বায়তুল মোকাররমে সভা করে ইয়াহিয়ার ঘোষণার প্রতিবাদ জানায়। ইয়াহিয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছিলো মুসলিম লিগের একাংশের প্রধান খান আবদুল কাইয়ুম। তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদে দল থেকে পদত্যাগ করেন সাধারণ সম্পাদক খান এ সবুর। তিনি দলের সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি নেন।

পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর আমির গোলাম আযম এদিন এক বিবৃতিতে সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলে, ‘এটা অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক, কারণ যে মুহূর্তে জাতি আগ্রহভরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য অপেক্ষা করছিলো তখনই এ ঘোষণার মাধ্যমে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক গতি ব্যহত করা হলো। স্থগিতাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে বলে মনে করা ঠিক হবে না।’ গোলাম এসব কিছুর জন্য জুলফিকার আলীর ভুট্টোকে দায়ী করে।

পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি প্রধান নুরুল আমিন এক বিবৃতিতে এই ঘোষণার নিন্দা করে বলেন,‘রাষ্ট্রপতির ঘোষণায় আমি হতভম্ব হয়ে গেছি’। একই প্রতিক্রিয়া জানান পাকিস্তান ন্যাশনাল লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান।অলি আহাদ, শফিকুল ইসলাম, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন প্রধান মতিয়া চৌধুরীও একই রকম বিবৃতি পাঠিয়ে প্রতিবাদ জানান।

ঢাকার সব মিছিল যাচ্ছিলো হোটেল পূর্বানীর সামনে। এখানেই চলছিলো আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির তিনদিনের জরুরী বৈঠক। দুপুর সাড়ে তিনটায় শেখ মুজিবুর রহমান জানালেন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সাংসদরা তাকে জনগনের স্বার্থে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং ঘোষণা দেওয়ার পূর্ণ কর্তৃত্ব দিয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে সেদিন এবং পরদিন ২ মার্চ হরতাল ডাকলেন। ঘোষণা দিলেন ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে পরবর্তী কর্মসূচী জানানোর। বটতলায় ছাত্র সংঘের মিছিলটি হয়েছিলো কিনা জানা যায়নি, তবে ওই একই জায়গা (বিশ্ববিদ্যালয় বটতলা) থেকে একই সময় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের এক মিটিং শেষে মিছিল বের হয় যারা সারা শহর প্রদক্ষিণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করা হয়। তবে টিঅ্যান্ডটি কর্মচারীরা জাতীয় স্বার্থে তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়।

MUJIB’S CALL FOR EMANCIPATION OF BENGALEES

Talk with pressmen after the parliamentary party meeting, at Hotel Purbani, on March 1, 1971

Sheikh Mujibur Rahman, the Awami League Chief, while talking to the pressmen immediately after the parliamentary party meeting at Hotel Purbani following the announcement of the postponement of the National Assembly session, said that he would make all sacrifices for the emancipation of the 70 million Bengalees.

He further said that a united fight has to be put for ending the colonial treatment to which Bengalees have been subjected for the last 23 years.

The Sheikh said: “Only for the sake of a minority party’s disagreement the democratic process of constitution making has been obstructed and the National Assembly session has been postponed sine die. This is most unfortunate as far as we are concerned. We are the representatives of the majority people and we cannot allow it to go unchallenged”.

Sheik Mujibur Rahman announced a programme for the next 6 days which included observance of complete strike today in Dacca and a country-wide strike on the 3rd March the date earlier fixed for the National Assembly to meet. On the 7th March a public meeting will be held at the Race Course Maidan in which the Awami League Chief shall announce the final programme. The Sheikh uttered a note of warning: “You will see history made if the conspirators fail to come to their senses”. In a determined voice Sheikh Mujib declared:

We are ready for any consequence. I have mentioned many times the fact that a conspiracy is going on in this country. There was a General Election and the people have elected us to serve them and we have a responsibility towards them. But in spite of the clear verdict in our favour, the conspiracy has struck its root.

The majority of the elected representatives of the people are from Bangla Desh and in collaboration with the elected representatives from West Pakistan with the exception of Bhutto’s and Qayyum’s Parties, we were quite capable of framing the Constitution. We cannot betray our people and we cannot betray the trust the people have placed on us. We shall continue our struggle until we achieve our goal. You know that there is Martial Law in the country. But the Chairman of the Pakistan People’s Party has threatened the members of the National Assembly from West Pakistan who were willing to come to East Pakistan to attend the session that they would be liquidated if they come to East Pakistan to attend the National Assembly Session. Mr. Bhutto has taken the Law in his own hands. Is the Law and Order situation only meant for the poor Bengalees?”

Sheik Mujib continued “We want co-operation and we have told them repeatedly that they should come to the National Assembly where we will be able to discuss the framing of the constitution for five days at a time and hold discussion for another five days. Democracy demands that the voice of the majority should be accepted. But in our case, the minority party has always had the upperhand. I suggested that 15th February be set for the opening of the National Assembly, but the Assembly was called for in the first week of March in accordance with the wishes of the minority party.

“This is nothing but a conspiracy which has been played for long 23 years in this country and is still going on only to exploit the 70 million people of Bengal. It is intended to keep Bengal as the colonial market and we are fighting for justice and fairplay and we shall continue fighting until we achieve our goal”.

! In reply to a question whether he would proclaim unilateral Independence, Sheikh Mujib said “You Wait”. When asked by correspondent whether he was consulted before the postponement of the National Assembly, he said, “No”.

To a question of another correspondent regarding the unarming of the Police force at Rajarbagh Police Lines Sheikh Mujibur Rahman expressed his ignorance about it and requested the Press to publish any information they may have in this respect.

When asked whether he apprehended arrest of his Party members, he said that they were ready for any consequences. Many times the}- had courted arrests before. He added, “My people are with me and let us hope for the best and prepare for the worst”.

When asked whether he will oppose Censorship if imposed on the Press Sheikh Mujib replied, “I oppose everything that curbs the freedom of the people”.

He informed the press that members of the Awami League Parliamentary Party renewed their pledge to fight to the end and make any sacrifices to achieve the rights of the people. He categorically declared that any sacrifice was too small for the emancipation of the people of Bangla Desh. He also informed that he would discuss latest developments with Maulana Bhashani, Md. Nurul Amin, Mr. Ataur Rahman Khan, Professor Muzzaffar Ahmed and other leaders, as soon as possible.

Replying to a question about the fate of non-Bengalees living in Bengal, the , Awami League Chief said, “they are sons of the soil, they should think this soil as their own and they must join with the people here”.

To a question as to what West Pakistan should do Sheikh Mujib said, “they should also rise to the occasion and protest against this conspiracy.”

In course of his talk Sheikh Mujibur Rahman stated that Mr. Bhutto had always been acting in the most irresponsible manner. During the Round Table Conference called by Ayub Khan, he declined to attend. Bhutto had also refused to participate in the elections but subsequently agreed to participate. Now he has refused to attend the proceedings of the National Assembly and in all these instances he was given decided preference over the leader of the majority party. Sheikh Shahib stated, “So far as I am concerned, my people have given a verdict on the Six-Point programme and we shall form the constitution on the basis of Six Points and Eleven Points”.

(THE PEOPLE, Dacca-March 2, 1971)

Source – Bangladesh Documents, vol – 1, Page no – 189 – 191

(তথ্যসূত্র: ১৯৭১ সালের বিভিন্ন পত্রিকা ও বার্তাসংস্থা থেকে। )