আমি আল বদর বলছি

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলাপচারিতায় জামাত-শিবিরের তরুণ প্রজন্মের সদস্যদের বিভ্রান্তিকর অবস্থান এবং মনোভাব নিয়ে জানার আগ্রহ ছিলো। এ কারণেই পড়া শুরু করি তাদের পাঠ্যসূচীতে থাকা বইগুলো। এগুলোর একটা ভৈরব ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা ও আল-বদর কমান্ডার আমিনুল হকের ‘আমি আল-বদর বলছি’। ব্রাক্ষণবাড়িয়া শহরে বুদ্ধিজীবি হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক এবং সে সময়কার ত্রাস আমিনুল ইসলামী ছাত্র শিবির ও জামাতে ইসলামীতে রীতিমতো লিভিং লিজেন্ডদের একজন। বইয়ের অসত্য ইতিহাস, উগ্র সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গী এবং মিথ্যাচারের মাধ্যমে নিজের কর্মকাণ্ড জায়েজ করার যে চেষ্টা নিয়েছে এই ভয়ঙ্কর ঘাতক, তা অবশ্যই উল্লেখের দাবি রাখে। তার বিরুদ্ধে দুইটি হত্যাকাণ্ডে চল্লিশ বছর সশ্রম কারাদন্ডের সাজা হয়েছিলো বলে সে লিখেছে। ’৮১ সালে সে জেল থেকে বের হয় এবং সৌদি ঘরানার বদলে ইসলামী ছাত্র শিবির ও জামাতের একাংশে ইরানী স্টাইলে বিপ্লবের চেতনা ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগী হয়।
এই বই পড়ার পর প্রবাসী এক জামাত সদস্য মন্তব্যে লিখেছে: কে এম আমিনুল হকের লেখা “আমি আলবদর বলছি” বইটি পড়লাম। ইতিপূর্বে ডা. ফিরোজ মাহবুব কামালের “একাত্তরের আত্মঘাতের ইতিহাস” সহ প্রফেসর সাজ্জাদ হোসাইনের “একাত্তরের স্মৃতি” এবং প্রফেসর মুমিন চৌধুরির “Behind The Myth of 3 Million” বইগুলিও পড়েছি। সবগুলি বই খাটি তথ্য নির্ভর এবং অসাধারণ যুক্তি সমৃদ্ধ। যতই পড়ছি ততই হতবাক হয়ে যাচ্ছি বর্তমান সময়ের মিথ্যার জয়জয়কার দেখে। আমি স্বাধীনতাপন্থীদের লেখা ইতিহাসও পড়েছি। কিন্তু তাদের লেখায় পাকিস্তান এবং পাকিস্তান পন্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ও বিষদগার ছাড়া তেমন কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। ঐতিহাসিক মান ও সমসাময়িক যুক্তির নিরিখেও সেগুলো আলচ্য বইগুলোর আশে-পাশে আসার যোগ্য নয়। কিন্তূ তারপরেও সত্যের এই পরাজয় কেন? আমার কাছে মনে হয়েছে যারা মিথ্যা প্রপাগান্ডার শিকার তাদের সীমাহীন অযোগ্যতা ও একাগ্রতাহীনতাই আজকের এই অবস্থার জন্য দায়ী। অবাক হই বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোর স্বাধীনতাত্তোর ভুমিকা দেখে। তাদের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে প্রপাগান্ডা চলেছে এবং চলছে। তারা এত আন্দোলন-সংগ্রাম করে, অথচ এই সত্য কথাগুলো আমরা নতুন প্রজন্মদের সামনে কখোনও তুলে ধরার চেস্টাই করেনি। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই তথ্যগুলো যদি আমাদের কাছে না আসত তাহলে এই সত্য কখনোও জানতামই না। (মুলতঃ ডা ফিরোজ কামালের লেখা “একাত্তরের আত্মঘাতের ইতিহাস” বইটি পড়ে এই জাতির ইতিহাস জানার প্রচন্ড আগ্রহ সৃষ্টি হয়।) এই আমি কিছুদিন আগ পর্যন্তও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে অহরহ দাবী করতাম একাত্তরে তাদের ভুমিকার জন্য জাতির কাছে মাফ চাইতে। অথচ এখন আমার মনের অবস্থা এই যে, ভবিষ্যতে যদি আবার কখোনও এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তবে পরিণতির কথা না ভেবেই ঐ একই ভুমিকা নেওয়া উচিত যা তারা একাত্তরে নিয়েছিল।
যাইহোক আমার বিশ্বাস এই অবস্থা একদিন থাকবে না। তার প্রমাণ আজকের এই বইগুলো। আমি মনে প্রাণেই বিশ্বাস করি তথাকথিত জাতির পিতাকে ইতিহাস একদিন মিরজাফরের কাতারে দাঁড় করাবেই। তার চিহ্ন ইতিমধ্যে ফুটে উঠা শুরু হয়েছে। আমি বাংলাদেশকে এখনও কিছুটা স্বাধীন মনে করি। তবে সে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টে, তথাকথিত ষোলই ডিসেম্বর নয়।…’
তো এমন জিহাদী জোশ জাগিয়ে তোলার ক্ষমতায় বলীয়ান বইটির অনলাইন ভার্সন শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না বন্ধুদের সঙ্গে।প্রসঙ্গত বইটিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত স্পেশাল ট্রাইবুনালে সম্পূরক তথ্য ও উপাত্ত হিসেবে আমলে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।